Hits: 13
আপিল মামলা ও ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের মামলায় রায় পেলেও গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের শিশুদহ বিল ভোগদখলে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। গত ৪ অক্টোবরের পর আবারও মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) বিলে মাছ ধরতে গেলে পুলিশ গিয়ে নিষেধ করে। আপিলের রায় অমান্য ও অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ অমান্য করার হাত থেকে রেহাই পেতে উপজেলা প্রশাসন ব্যাকডেটে যাদের বিল ইজারা দিয়েছে প্রকৃত মালিকদের শান্তিপূর্ণ ভোগদখলে তারাই এখন সমস্যার সৃষ্টি করছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, শিশুদহ গ্রামের এই বিলটি পৈত্রিক সূত্রে পেয়ে যতি মামুদ, খতি মামুদ ও লতি মামুদের ৩৬ জন অংশীদার ভোগদখল ও খাজনা দিয়ে আসছেন। কিন্তু ২০০০ সালে খাজনা না নিয়ে বিলটি সরকারি খাস হিসেবে দাবি করা হয়। এর প্রেক্ষিতে ২০০০ সালের ৬ জুন অংশীদাররা শিশুদহ বিল নিজেদের দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করলে ২০০৮ সালের ২১ এপ্রিল তা খারিজ হয়। পরে একই সালের ২৬ জুন আপিল করলে ২০১১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পক্ষে রায় পান বাদীরা। পরে বিলের জমি নিজেদের নামে রেকর্ডের জন্য গাইবান্ধা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর মামলা দায়ের করলে বাদীরা পক্ষে রায় পান চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি।
এদিকে, আপিল মামলার রায় অমান্য করে পলাশবাড়ীর তৎকালীন ইউএনও মো. মেজবাউল হোসেন ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তিন বছরের জন্য শিশুদহ বিলের জলমহাল ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন ও ১৩ মার্চ উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সভাপতি হিসেবে বিলটি ইজারা দেন। এই সভায় বলা হয়, শিশুদহ বিল নিয়ে বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ৪১/২০১৯ নম্বর মামলাটি চলমান রয়েছে এবং এতে ইজারা দেওয়ার বিষয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা নাই। পরে ১৬ এপ্রিল ইজারা চুক্তি সম্পন্ন করেন ইউএনও। কিন্তু চিরস্থায়ী ও অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার ৪১ নম্বর মামলাটি দায়ের করা হয় ১৯ মার্চ। তাহলে মামলা দায়েরের ছয় দিন আগে ইউএনও কিভাবে জানলেন এই মামলা সম্পর্কে। ২১ এপ্রিল আদালতের দেওয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশে বলা হয়- বিবাদী (ডিসি, ইউএনও এবং এসি ল্যান্ড) যেন এই শিশুদহ বিল ইজারা দিতে না পারে বা শান্তিপূর্ণ ভোগদখলে বাঁধা দিতে না পারে।
অপরদিকে, ৯ মে ইজারা গ্রহীতাদের ১৬ মের মধ্যে ইজারার টাকা জমা দিয়ে ইজারা চুক্তি সম্পন্ন করতে বলেন তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আরিফ হোসেন। তাহলে ৪১ নম্বর মামলা দায়েরের আগেই সভায় মামলাটি সম্পর্কে মন্তব্য করা ও ৯ মে ইজারার টাকা জমা দিয়ে চুক্তি সম্পাদন করতে বলার আগেই ১৬ এপ্রিল ইজারা চুক্তি সম্পন্ন করার ঘটনায় খুব সহজেই প্রতিয়মান হয় যে, এসব ব্যাকডেটে করা হয়েছে।
বিলের মালিকদের মধ্যে মো. শওকত আলী ও খাইরুল ইসলামসহ কয়েকজন বলেন, আপিল মামলা ও ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের মামলায় রায় পেলেও আমরাই এখন বিলে যেতে পাচ্ছি না। বিলে মাছ ধরতে গেলেই পুলিশ পাঠিয়ে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। গত ৪ অক্টোবর বিলে পুলিশ পাঠিয়ে মাছ ধরতে বাঁধা দেওয়া হয়। এরপর মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে বিলে মাছ ধরার সময় আবারও পুলিশ এসে শাসিয়ে গেছে ও মাছ ধরতে নিষেধ করেছে।
এ বিষয়ে পলাশবাড়ী থানার ওসি মো. মাসুদ রানা বলেন, জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ থেকে কল এসেছিল। তাই সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে দিয়ে মাছ ধরতে নিষেধ করা হয়েছে। যারা বিলের মালিক হিসেবে দাবি করছে তারা কাগজপত্র নিয়ে আসুক।