Hits: 15
তিন মাস আগে যমুনা নদীর ভাঙনে বিলীন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের জিয়াডাঙ্গা কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; অত:পর অন্য ইউনিয়নে স্থানান্তর করা হয়। এতে করে ১২ সেপ্টেম্বর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু হলেও ওই বিদ্যালয়ের ভর্তিকৃত ২৭৯ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে না পারায় বিপাকে পড়েছে। কোমলমতি এসব শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে উত্তর ঝানঝাইর অথবা পুর্ব চর গজারিয়াতে স্কুলটি স্থাপন করার দাবি জানিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা অফিসার বরাবরে আবেদন করেছে অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গজারিয়া ইউনিয়নের জিয়াডাঙ্গা মৌজার ভোটার বর্তমানে উড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামে বসবাসকারী মৃত: জমশের আলী ভুঁইয়ার পুত্র মো: শামছুল হক ভুঁইয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে রাতের আধারে গত ১ সেপ্টেম্বর উত্তর ঝানঝাইর থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে চর রতনপুর মৌজায় জিয়াডাঙ্গা কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার উড়িয়া ইউনিয়নের চর রতনপুর এলাকায় অবস্থিত জিয়াডাঙ্গা কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফাঁকা স্থানে কোন রকমে একটি টিনের ছাপড়া তুলে ক্লাস নেওয়া ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানো কোন শিক্ষার্থী নেই। ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ চারজন শিক্ষক বসে আছে। একজন শিক্ষক পিটিআইতে আছেন। কারণ যে এলাকায় স্কুল স্থানান্তর করা হয়েছে সেখানকার কোন ছাত্র/ছাত্রী নেই। জিয়াডাঙ্গা কমিউনিটি বিদ্যালয়ের ভর্তিকৃত ২৭৯ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নদী পার হয়ে তিন কিলোমিটার দুরে গিয়ে ক্লাস করতে আসবে না।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ববিতা আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন করোনা ও বন্যার কারণে স্কুল বন্ধ ছিলো। ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার ঘোষণায় খুশি হয়েছিলাম। কিন্ত স্কুল খোলার দিন স্কুলে এসে দেখি আমাদের গ্রামে আর স্কুল নেই। বাবাকে স্কুলের কথা জিজ্ঞেস করতে বাবা বলেন, তোদের স্কুল রতনপুরে নিয়ে গেছে। আর স্কুলে যেতে হবে না। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের স্কুল নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। স্কুলের জিনিসপত্র জোড়সোড় করে পশ্চিম ঝানঝাইর রাখা ছিল। কিন্তু আমরা পড়ে জানতে পারি আমাদের স্কুল অনেক দুরের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা কিভাবে দুরের স্কুলে যাতায়াত করবো।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শরিফা আক্তারের পিতা শহিদুল ইসলাম বলেন, কিছু স্বার্থন্বেষী মহল সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারি শিক্ষা অফিসার মো: কামরুজ্জামানের যোগসাজসে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও অভিভাবকদের অজান্তে নদীর ওপর প্রান্তে ৩ কিলোমিটার দুরে বিদ্যালয় গৃহের মালামাল আসবাবপত্র ২নং উড়িয়া ইউনিয়নের চর রতনপুরে স্থানান্তর করা হয়। অভিভাবক দুদু মিয়া জানান, মো: শামছুল হক ভুঁইয়া জিয়াডাঙ্গা মৌজার ভোটার। তিনি নদী ভাঙনের কারণে বসতবাড়ী গড়ে তুলেছেন উড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামে। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই সহকারি শিক্ষা অফিসার গত ১ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ ঝানঝাইরা থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে চর রতনপুর মৌজায় জিয়াডাঙ্গা কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করে। সেখানে এক কিলোমিটার মধ্যে দুটি বিদ্যালয় রয়েছে। একটি চন্দনস্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অন্যটি আঙ্গারিদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এ প্রসঙ্গে আবেদনকারী মো: শামছুল হক ভুঁইয়া বলেন, রতনপুর নয়, মূলত জিয়াডাঙ্গা মৌজাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ২০১৭ সালে গলনা মৌজায় বিদ্যালয়টি গড়ে তোলা হয় এবং পুনরায় ভেঙ্গে গেলে জড়োসরো করে রাখা হয়। বর্তমানে জিয়াডাঙ্গা মৌজাটি পুনরায় চর ভরাট হওয়ায় পূর্বের স্থান জিয়াডাঙ্গা মৌজায় বিদ্যালয় স্থানান্তর করা হয়।
আবেদনকারী পশ্চিম ঝানঝাইর গ্রামের বাসিন্দা ও অভিভাবক মো: শহিদ বলেন, দক্ষিণ ঝানঝাইর মৌজা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ঠিক আছে। পশ্চিম ঝানঝাইর, উত্তর ঝানঝাইর ও ঝানঝাইর সংলগ্ন উত্তর চর গজারিয়াতে স্কুলটি স্থাপন করা যেত। এ অঞ্চলের ছাত্র/ছাত্রীদের কথা চিন্তা করে উল্লেখিত তিন চরের যে কোন একটিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করলে ভর্তিকৃত ২৭৯ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করতে পারতো।
জিয়াডাঙ্গা কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো: জয়নাল আবেদীন জানান, গত তিন মাস আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ক্যাচম্যান এলাকা দক্ষিণ ঝানঝাইর মৌজা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। স্কুল ঘর, চেয়ার-ব্রেঞ্চসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা হয় পশ্চিম ঝানঝাইরে। পশ্চিম ঝানঝাইরে না হলেও ঝানঝাইর সংলগ্ন পূর্ব চর গজারিয়াতে বিদ্যালয়টি স্থাপন করা যেত। কোন অদৃশ্য কারণে বিদ্যালয়টি ওই স্থানে নিয়ে যাওয়া হলো তা আমার বোধ্যগম নয়।
প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মো: আকরাম হোসেন বলেন, ১৯৯১ সালে স্থাপন করা হয় বিদ্যালয়টি। তারপর থেকে চারচালা দু’টি টিনের ঘরে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যহৃত ছিল। তিনি আরও বলেন, দুই তিন মাস আগে বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় যমুনার ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনের কারণে বিদ্যালয়টি অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হলেও কোন ছাত্র/ছাত্রী স্কুলে আসে না। কারণে হিসেবে তিনি বলেন, পূর্বের শিক্ষার্থীরা তিন কিলোমিটার পথ পেড়িয়ে এখানে আসবে না। সেজন্য ২৭৯ জন শিক্ষার্থীর জীবন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন বলেন, মো: শামছুল হক ভুঁইয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে সহকারি শিক্ষা অফিসার মো: কামরুজ্জামানের মাধ্যমে তদন্ত সাপেক্ষে এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজের পরামর্শক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ওই স্থানে স্থানান্তর করা হয়। জিয়াডাঙ্গা মৌজায় কোন জায়গা না থাকায় এটি করা হয়েছে। এখন ২৭৯ জন শিক্ষার্থীর জীবন অনিশ্চয়তার জানতে চাইলে তিনি জানান, আশপাশে আরোও স্কুল আছে সেখানে তারা পড়ালেখা করবে।