Hits: 15
অবশেষে জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন গাইবান্ধার সাংবাদিকদের বাতিঘর আবু জাফর সাবু। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৮ দিনের মাথায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, পাঁচ দশকের অন্যতম ছাড়াকার, ছোটগল্প, গান, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, জীবনঘনিষ্ঠ ফিচার, ভ্রমণকাহিনী লেখক এবং সাংবাদিক নেতা (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
গতকাল শনিবার (২৮ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টা ১৫মিনিটে বগুড়ার টিএমএসাসে হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। আবু জাফর সাবুর ছেলে আবু কায়সার শিপলু খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
গত ২০ আগস্ট (শুক্রবার) সাংবাদিক আবু জাফর সাবুর শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ওই রাতেই তাকে বগুড়ার টিএমএসএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৮ আগস্ট (শনিবার) ভোরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এরপর দুপুরে টিএমএসএস হাসপাতালে আবু জাফর সাবুর জন্য আইসিইউ পাওয়া যায়। ওই হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১৫মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
আজ রবিবার (২৯ আগস্ট)বেলা ১২টায় তার মরদেহ গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে নেয়া হবে। সেখানে আবু জাফর সাবুর দীর্ঘদিনের সাংবাদিক সহকর্মীরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর বাদ যোহর গাইবান্ধা ইসলামিয়া হাইস্কুল মাঠে নামাজে জানাযা শেষে পৌর গোরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হবার কথা রয়েছে।
সাংবাদিক আবু জাফর সাবুর মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে গভীর শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন।
আবু জাফর সাবু ছিলেনগাইবান্ধার সাংবাদিকদের বাতিঘর। সাংবাদিকদের সংকটের দিনে তার সরব উপস্থিতি আমাদের প্রাণিত করে। গাইবান্ধায় সাংবাদিকতার পেশাগত মানকে যারা প্রতিষ্ঠা করেছেন, আবু জাফর সাবু তাদের মধ্যে অন্যতম। সাংবাদিক নেতা হিসেবে আবু জাফর সাবু অত্যন্ত সাহস ও মুন্সীয়ানার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। সাংবাদিকদের স্বাধীনতার প্রশ্নেও তিনি ছিলেন আপসহীন।
আবু জাফর সাবু, পাঁচ দশকের অন্যতম ছাড়াকার। পাশাপাশি তিনি ছোটগল্প, গান, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, জীবন ঘনিষ্ঠ ফিচার এবং ভ্রমণকাহিনী লেখায় নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে দেদীপ্যমান। যদিও সাহিত্যের নানা মাধ্যমে তিনি সক্রিয় তবুও ছড়া চর্চাতেই তাঁর সিদ্ধি ও সাফল্য উল্লেখ করার মত। গত শতকের ষাটের দশকে লেখালেখির অঙ্গণে তাঁর আবির্ভাব। সে সময়ে দেশের সব সাহিত্য সাময়িকীতেই তাঁর উপস্থিতি ছিল অনিবার্য। শিশুতোষ গল্প, কবিতা, ছড়া এই তিনটি মাধ্যমে তিনি লিখেছেন নিয়মিত। পরবর্তীকালে অবশ্য সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তিনি বেতারে নাটক, কথিকা, গান ইত্যাদি ফরমায়েশি লেখায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন তবুও মূলত ছড়া সাহিত্যের চর্চাই তাঁর মৌল প্রবণতা, যা আজ জীবনের শেষ অবধি অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে অব্যাহত ছিলো।
আবু জাফর সাবু’র ছড়ার বিষয় বৈচিত্র্য বহুমুখী হলেও দেশ ও মানুষের সমকালীন সমস্যা উপস্থাপনায় তিনি অধিকতর মনোযোগী ও পারঙ্গম। সে কারণেই তাঁর লেখা সবসময়ই পাঠকনন্দিত ও বহুলপঠিত। এই প্রেক্ষিত বিবেচনা করে নির্দ্ধিধায় বলা যায়, আবু জাফর সাবু একজন অনন্য সাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক।
তিনি লেখালেখি শুরু করেন ১৯৬৩ সাল থেকে দৈনিক ইত্তেফাকের ‘কচিকাঁচার আসর’-এর মাধ্যমে, যখন তিনি সবে এসএসসি পাশ করে স্কুলের গন্ডি পেরিয়েছেন। এরপর দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক পয়গাম, সাপ্তাহিক জাহানে নও, সাপ্তাহিক পূর্বদেশ, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকায় তাঁর ছোট গল্প ও ছড়া প্রকাশ হওয়া শুরু হয়। এছাড়া রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাই সম্পাদিত মাসিক কচিকাঁচা, এখলাস উদ্দিন সম্পাদিত টাপুর টুপুর, মাসিক টইটম্বুর, মাসিক শিশু, নবারুণ, কিশোর বাংলাসহ সারাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলা থেকে প্রকাশিত অসংখ্য পত্র পত্রিকা ও সংবাদপত্রের শিশু কিশোর পাতায় ছড়া, পদ্য, ছোট গল্প, নাটিকা, বিজ্ঞান ও পশু পাখি বিষয়ক নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তাঁর সম্পাদিত দ্বিমাসিক ছড়া পত্রিকা ‘ইষ্টিকুটুম’ ১৯৭৯ সালের মে মাস থেকে ১৯৮০ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে সে সময় দেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। ভারতের পশ্চিম বাংলার বিশিষ্ট ছড়াকাররাও লিখতেন এই ছড়া বিষয়ক ছোট কাগজে। ইষ্টিকুটুমের বৈশিষ্ট্য ছিল বক্তব্যধর্মী ও সমাজ সচেতনমূলক ছড়া প্রকাশ করা।
১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকারের মহকুমাভিত্তিক সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত লেখক আবু জাফর সাবু’র লেখার প্রাচুর্যের তুলনায় প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা খুব কম। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কর্তৃক ১৯৯৬ সালে ‘বুনো হাঁস ও নেংটি ইঁদুর’ নামে একটি শিশু কাব্য নাটিকা’র বই এবং আলপনা প্রকাশনীর ছড়ার বই ‘ছন্দের আল্পনা’ ১৯৭৭ সালের মে মাসে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ ফেব্র“য়ারি থেকে ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত আলোকিত গাইবান্ধার প্রকাশনায় ছড়ার বই ‘ঘুম ভাঙানিয়া ছড়া’, ও ‘স্বপ্নীলের জন্য ছড়া’ এবং ভারত ভ্রমণ কাহিনী ‘শান্তিনিকেতন থেকে তাজমহল’ ও শিশু-কিশোর ছোট গল্প গ্রন্থ ‘মামা কাহিনী ও অন্যান্য গল্প’ নামে এবং কবিতার বই ‘পড়ন্ত বিকেলের রোদ’ তাঁর লেখা এই ছয়টি বই প্রকাশিত হয়।
শুধু দেশেই নয়, ভারতের শিশু-কিশোর পত্রিকাগুলোতে তিনি একাধিক ছড়া এবং ছোট গল্প লিখেছেন। এরমধ্যে ১৯৭৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ভারতের পশ্চিম বাংলার কোলকাতা, বাকুড়া, হাওড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান, হুগলি থেকে প্রকাশিত ছোটদের মাসিক পত্রিকা তেপান্তর, টুকলু, শিশু প্রিয়া, মণিমুক্তা, আনন্দ বিচিত্রা, মুক্ত বিহঙ্গ, কেকা, মঞ্জুরী, হৈ চৈ পত্রিকায় এবং টুকলু ছড়া কার্ডে নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি বেতারে কথিকা ও কবিতা পাঠ অংশগ্রহণ শুরু করেন ১৯৮০ সাল থেকে। ১৯৯৪ সালের ১৭ নভেম্বর মাসে গীতিকার এবং ১৯৮৯ সালের ২৫ আগস্ট মাস থেকে তালিকাভূক্ত নাট্
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সাপ্তাহিক দারিয়াপুর