Hits: 26
চলছে শোকের মাস। শ্রাবণের অঝোর ধারা আর বাঙালির অবারিত চোখের পানি মিলেমিশে বেদনার এক বিস্তৃত মহাসাগরে রূপান্তরিত হতে দেখি দেশটাকে এ মাসে। যার যতটা সাধ্য সেভাবেই স্মরণ করেন তাকে অন্তরের গভীর তল থেকে। কবিরা অন্তর্যামী। তাই অনেক কিছুই আগে ভাগেই তারা দেখতে পান। সে কারণেই পঁচাত্তরের পরে যখন নিকষ কালো অন্ধকার নেমে এসেছিল বাংলাদেশের সমাজে, তখনো নিরাশ হননি কবিরা। ‘তুমি কেউ নও’ বলে যখন বিশ্বাসঘাতকের দল আস্ফালন করছিল, তখন কবি মহাদেব সাহা বলে উঠেছিলেন, ‘কিন্তু বাংলাদেশের আড়াই শত নদী বলে/ তুমি এই বাংলার নদী, বাংলার সবুজ প্রান্তর।’ ‘ধন্য সেই পুরুষ’ কবিতায় আমাদের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমান বলে উঠেছিলেন, ‘ধন্য সেই পুরুষ যাঁর নামের ওপর পতাকার মতো/ দুলতে থাকে স্বাধীনতা।’ কবি আরও বলেছিলেন, ‘এমনি অক্ষয় তিনি যাঁর নামের ওপর কখনো ধুলো জমতে দেয় না হাওয়া।’ প্রকৃতির সেই সন্তানের নামে এ দেশের পাখি, গাছ, নদী, ফুলসহ সবাই ‘শেখ মুজিবের নামে প্রতিদিন লেখে তারা নতুন কবিতা/ মুজিব গোলাপ হয়ে ফোটে, লাল পদ্ম হয়ে ফোটে হৃদয়ে হৃদয়ে।’ (মহাদেব সাহা, ‘শেখ মুজিব আমার নতুন কবিতা’)। মনে হয় মধুমতির বুক বেয়ে তিনি সত্যি ফিরে এসেছেন তার প্রিয় বাংলাদেশে। কবি শামসুর রাহমান তাই বলতে পারেন, ‘এখন তো তিনি নেই, তবু সেই ধ্বনি আজ শুধু/ তারই কথা বলে।’ (‘তিনি এসেছেন ফিরে’)।
তিনি আছেন বিরাজমান আমাদের চারপাশে। প্রতিদিন তিনি আরও বড় হচ্ছেন। আরও ব্যাপক হচ্ছেন। কেননা তিনি যে মহৎ প্রাণ। নিজের জন্য তিনি কখনো ভাবেননি। ভেবেছেন বাঙালির জন্য, বিশ্বের পুরো মানবজাতির জন্য। নিজেই লিখেছেন তিনি, ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এ নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’ (‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’)। আজীবন তিনি লড়েছেন মানুষের মুক্তির জন্য। তার সেই লড়াই বিস্তৃত হয়েছিল প্রতিটি বাঙালির অধিকার আদায়ের লড়াই থেকে স্বাধীনতার সংগ্রাম পর্যন্ত।
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সাপ্তাহিক দারিয়াপুর