Hits: 6
এদিকে, রেডিওতে মেজর ডালিমের ঘোষণা শুনে জীবনবাজি রেখে সব নীরবতা ভেঙে সকালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদে রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল বের করে কিশোরগঞ্জের একদল তরুণ।
জানা যায়, ১৫ আগস্ট সকাল ৯ টার দিকে শহরের ষ্টেশন রোডে রঙমহল সিনেমা হল সংলগ্ন এলাকায় সে সময়কার জেলা ছাত্র ইউনিয়ন কার্যালয়ে সমবেত হয় একদল তরুণ। ইতিহাসের বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার চেয়ে এবং সামরিক আইন জারির প্রতিবাদে মিছিলকারীরা ‘মেজর ডালিমের ঘোষণা মানি না, মানব না’, ‘মুজিব হত্যার পরিণাম, বাংলা হবে ভিয়েতনাম’, ‘মুজিব হত্যার বদলা নেব, বাংলাদেশের মাটিতে’, ‘সামরিক আইন তুলে নাও, গণতন্ত্র ফিরিয়ে দাও’-সহ নানান শ্লোগানে রাজপথ কাঁপিয়ে তোলে ওই তরুণেরা।
রংমহল সিনেমা হলের সামনে থেকে শুরু করে মিছিলটি শহরের গৌরাঙ্গ বাজার, পুরানথানা, একরামপুর, বড়বাজার, ঈশা খা রোড, রথখোলা, আখড়াবাজার, কালীবাড়ী রোড হয়ে ছাত্র ইউনিয়ন কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। মিছিলের খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশের একটি ট্রাক এসে ছাত্র ইউনিয়ন অফিসের সামনে থামে। বিপদ আঁচ করতে পেরে ছত্রভঙ্গ যে যার মতো চলে যান মিছিলকারীরা।
মাত্র ২০/২২ জনের অংশগ্রহণে সেদিনের মিছিলটি ছিল জাতির জনককে হত্যার ঘটনায় দেশে প্রথম প্রতিবাদ। সেদিনের তাৎক্ষণিক ও স্বতঃস্ফূর্ত এ প্রতিবাদ জাতির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
সেদিন মিছিলে অংশ নেয়া তরুণদের বেশিরভাগই এখনও জীবিত। জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে কেউ কেউ চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
সেদিন মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা হচ্ছেন, বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলা গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মৃত অ্যাডভোকেট আমিরুল ইসলাম, খালিয়াজুরি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ গোলাম হায়দার চৌধুরী, বীমা কর্মকর্তা মৃত সেকান্দর আলী, গণতন্ত্রী পার্টি জেলা শাখার সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান মুক্তু, অলক ভৌমিক, মৃত আকবর হোসেন খান, অ্যাডভোকেট অশোক কুমার সরকার, মুন্সিগঞ্জ শ্রীনগর খাড়রা চুড়াইন আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হালিম দাদ খান, ঠিকাদার নূরুল হোসেন সবুজ, সিপিবি’র সভাপতি ডা. এনামুল হক ইদ্রিস, কিশোরগঞ্জ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা পীযুষ কান্তি সরকার, একরামপুর পবিত্র লন্ড্রির গোপাল চন্দ্র দাস, পূরবী হোটেলের মালিক বীরমুক্তিযোদ্ধা মৃত মতিউর রহমান, সরকারি চাকুরে রফিক উদ্দিন পনির, অরুন কুমার রাউত, মৃত আবদুল আহাদ, নির্মল চক্রবর্ত্তী, ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী সাইদুর রহমান মানিক, অ্যাডভোকেট আলী আজগর স্বপন এবং মৃত সৈয়দ লিয়াকত আলী বুলবুল প্রমুখ।
সেদিনের সাহসী তরুণদের প্রতিবাদের বিষয়টি এখনও জেলাবাসী শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তবে সরকারিভাবে তাদের সাহসিকতার কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি কখনও। মেলেনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।
মিছিলে অংশ নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হাবিবুর রহমান মুক্তু জানান, ’বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবর শোনার পর আমার রক্ত টগবগ করছিল। মনে হচ্ছিল কিছু একটা করতে হবে। তাই নিজেরা নিজেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাস্তায় নেমে পড়ি। মিছিলকারীদের একজন হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করি।’
বিশিষ্ট আইনজীবী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অশোক সরকার বলেন, ‘সেদিন জীবনবাজি রেখেই আমরা জাতির পিতাকে হত্যার প্রতিবাদ করেছিলাম। এ জন্য অনেককে খেসারত দিতে হয়েছে। তবে বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। এখন মরেও শান্তি পাবো।’